ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

বিজয় দিবসের আগেই সরবে জিয়ার কবর

bd-pratidin-2016-09-12-04সংসদ ভবনের চূড়ান্ত নকশাসহ বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের করা নতুন ঢাকার ৮৫৩টি নকশাই চলতি মাসে সরকারের হাতে পৌঁছবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর পরই সংসদ এলাকায় জিয়ার কবরসহ লুই কানের নকশা-বহির্ভূত সব স্থাপনা উচ্ছেদ করবে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগেই জিয়ার কবর সরানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মন্ত্রী জানান, তবে সে কবর কোথায় প্রতিস্থাপন করা হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জিয়া পরিবারের সদস্যরা।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আশা করছি চলতি মাসের শেষ দিকে বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের করা ৮৫৩টি নকশাই আমাদের হাতে পৌঁছবে। সবগুলো নকশাই মোট চার সেট করে আনা হচ্ছে। গত জুন মাসে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে নকশাগুলো হস্তান্তরের জন্য চূড়ান্ত করে এসেছেন। নকশাগুলো আনার বিষয়ে গত দুই দিন আগেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের কাছে ই-মেইল করে বাইএয়ার (ডাক যোগে) দুই সেট নকশা পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সব দেনা-পাওনা আগেই পরিশোধ করা হয়েছে। আশা করছি, এ মাসের শেষ দিকে আমরা তা হাতে পেয়ে যাব।

এদিকে সংসদ ভবনের মূল নকশা পাওয়ার পরই সরকার সংসদ এলাকা থেকে জিয়ার কবরসহ নকশা-বহির্ভূত সব স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেবে। সংসদ ভবনের উত্তর পাশের চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে জিয়ার কবর সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। তবে তা কোথায় সরানো হবে এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব জিয়ার পরিবারের ওপর ছেড়ে দিতে চায়। এ বিষয়ে সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত সংসদ এলাকায় লুই কানের নকশা-বহির্ভূত কিছু থাকবে না। কিছু দিনের মধ্যে আমরা নকশা হাতে পাব। তখন নকশা-বহির্ভূত সব স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হবে। লুই কানের নকশায় এখানে কোনো কবরস্থানের জায়গা রাখা হয়নি। এ ছাড়া এখানে প্রকৃতপক্ষে জিয়ার লাশ নেই। এটা জিয়ার কবরও নয়। আশা করছি, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগেই সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়ার কবর সরিয়ে নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমরা দুবার চিঠি দিয়েছি।

কবর সরিয়ে কোথায় নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেহেতুে জিয়ার কবরের দাবিদার তার পরিবার, তারা যেখানে নিতে চায় সেখানে তা প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে তারা উদ্যোগী না হলে সরকার কোথায় প্রতিস্থাপন করবে—জানতে চাইলে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সেটা তখন দেখা যাবে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে এটা জিয়ার কবর নয়। হত্যাকাণ্ডের পর জিয়ার লাশ পাওয়া যায়নি এটা নিশ্চিত। যে কোনো হত্যা নিন্দনীয়। তার হত্যার নিন্দা জানাই। কিন্তু তাকে হত্যার পর হত্যাকারীরা একসঙ্গে চারজনের লাশ পুরিয়ে ফেলেছে বলে শুনেছি। সেখানে যদি জিয়ার লাশ থাকে তবে তারা সে ছবি দেখাক। আমি তো বলেছি ডিএনএ পরীক্ষা করেও প্রমাণ করা যাবে না।

জানা যায়, গত বছরের ১৭ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রথম জিয়াউর রহমানের কবর চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের ৭ জুলাই একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ ভবনের ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি লুই কানের নকশা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কবরগুলো যদি সরানোর দরকার হয়, তাহলে সরকার তা করবে। এরপর গত বছরের ১৪ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে স্থপতি লুই কানের নকশায় শেরেবাংলা নগর এলাকায় কবরস্থানের জন্য কোনো জায়গা রাখা হয়নি উল্লেখ করে জিয়ার কবরসহ সংসদের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জাতীয় কবরস্থান থেকে অপর সাতটি কবরও সরানোর পক্ষে মত দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এর পর থেকেই সংশ্লিষ্ট মহলে এই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবরটি সরিয়ে জিয়ার জন্মস্থান বগুড়া জেলার বাগবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সেক্টর কমান্ডারদের জন্য সংরক্ষিত কবরস্থানে জিয়াউর রহমানের কবরটি প্রতিস্থাপনের বিষয়েও আলোচনা হয়। জিয়ার কবরসহ নকশা-বহির্ভূত স্থাপনা সরিয়ে ফেলার বিষয় নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে।

স্পিকারের দফতর সূত্রে জানা য়ায়, নকশা খুঁজে পেতেই বেশি বেগ পেতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে ৮ হাজার নকশার মধ্য থেকে বাংলাদেশের নকশাগুলো খুঁজে বের করতে হয়েছে। সেখান থেকে সংসদ ভবনের মূল নকশাসহ শেরেবাংলা নগরের বিভিন্ন স্থাপনার ৮৫৩টি নকশা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৭৩৮টি সম্পূর্ণ নকশা এবং ১১৫টি অসম্পূর্ণ নকশা। এ সময় সেখানে লুই আই কানের নকশা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত এক স্থপতিরও সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তার বয়স এখন ৮৭ বছর। বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধি দল ওই স্থপতির সঙ্গে কথা বলেছেন। সংসদ ভবনের পাশাপাশি ১৯৬৪ সালে আধুনিক ঢাকা শহর গড়ে তোলার জন্য একটি ‘আইউব নগর’ গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ‘আইউব নগর’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘শেরেবাংলা নগর’ রাখা হয়। এর মধ্যে শেরেবাংলা নগরের নতুন সচিবালয়সহ পুরো এলাকায় কোথায় কী থাকবে, তার বিস্তারিত নকশা রয়েছে বলে জানা যায়।

লুই কানের নকশা হাতে পাওয়ার মাধ্যমে এবার সরকার হাতে পাচ্ছে ঐতিহাসিক স্থাপনা গড়ে তোলার মতো নগর নকশার বিশাল দলিলপত্র। শেরেবাংলা নগরে নতুন সচিবালয় গড়ে তোলার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকার খোঁজ পায় লুই আই কানের বিশাল নকশা ভাণ্ডারের। তখনই জানা যায়, পাওনা পরিশোধ না করায় লুই আই কানের নকশা নেই বাংলাদেশের কাছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে লুই আই কানের সব বকেয়া পরিশোধ করে সব নকশা দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় কমিটি। স্থপতি লুই আই কানের পারিশ্রমিক ও বকেয়াসহ সব পাওনা পরিশোধ করে এসব নকশা দেশে আনতে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবক্রমে সংসদ সচিবালয়ের কমিশন ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮০০ ডলারের একটি ব্যয় প্রস্তাব পাস করে। পরিকল্পনা কমিশনের সভায়ও অনুমোদিত হয় সচিবালয় কমিশনের সিদ্ধান্ত।

– See more at: http://www.bd-pratidin.com/first-page/2016/09/12/169523#sthash.8UP2lDeX.dpuf

পাঠকের মতামত: